২৫–৩৫ বছরেই লিভার বিকল! বিশেষজ্ঞের ভয়াবহ সতর্কবার্তা

 আপনি কি কখনো অস্বাভাবিকভাবে ক্লান্তি, পেট ফোলা বা ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়ার অভিজ্ঞতা পেয়েছেন? গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্ট ড. জোসেফ সালহাবের ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করা এক ভিডিও অনুযায়ী, এগুলো হতে পারে এক ক্রমবর্ধমান সমস্যার সতর্ক সংকেত-লিভার বিকল (লিভার ফেইলিউর) ও সিরোসিস এখন ২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ক্রমেই বেশি শনাক্ত হচ্ছে। একসময় মধ্যবয়সীদের রোগ হিসেবে বিবেচিত হলেও, এখন তা মাঝ-কুড়ি ও ত্রিশের কোঠার শুরুর দিকের মানুষকেও আঘাত করছে। এই বৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনজনিত মেটাবলিক সমস্যা। তাই সময় থাকতে কারণ, লক্ষণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থা জানা জরুরি।লিভার সিরোসিস কী ও কেন তা গুরুতর:জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট (এনএইচআই)-এ প্রকাশিত এক গবেষণা অনুসারে, লিভার সিরোসিস হলো দীর্ঘ সময় ধরে পুনঃপুন আঘাতের ফলে লিভারের টিস্যুতে অগ্রসরমান দাগ (স্ক্যারিং)। লিভার শরীরকে বিষমুক্ত রাখা, পুষ্টি উপাদান বিপাক এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যখন দাগযুক্ত টিস্যু সুস্থ লিভার কোষের জায়গা নেয়, তখন অঙ্গটি তার স্বাভাবিক কাজ করতে পারে না। সিরোসিস অনেক সময় অপরিবর্তনীয় হয়ে যায় এবং গুরুতর ক্ষেত্রে একমাত্র উপায় হয়ে দাঁড়ায় লিভার প্রতিস্থাপন। লিভারে ব্যথা স্নায়ু না থাকায় রোগটি বছরের পর বছর নীরবে অগ্রসর হতে পারে, যা সময়মতো শনাক্ত না হলে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে।


তরুণদের লিভার বিকলের প্রধান কারণ অ্যালকোহল সেবন:


ড. সালহাবের মতে, তরুণদের লিভার সিরোসিসের সবচেয়ে বড় কারণ মদ্যপান। অতিরিক্ত ও ধারাবাহিক মদ্যপানে অ্যাসিট্যালডিহাইডের মতো বিষাক্ত উপজাত তৈরি হয়, যা সরাসরি লিভার কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে ও দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ সৃষ্টি করে। প্রতিবার আঘাতের পর লিভার নিজেকে মেরামতের চেষ্টা করে, কিন্তু পুনঃপুন ক্ষতির ফলে স্থায়ী দাগ তৈরি হয়। টানা ৮–১০ বছরের অতিরিক্ত মদ্যপানে, বিশেষ করে পুষ্টিহীন খাদ্যাভ্যাস বা অন্য স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে মিলিত হলে, দ্রুত মারাত্মক ক্ষতি হতে পাঅ্যালকোহলবিহীন ফ্যাটি লিভার রোগের (NAFLD) বৃদ্ধি:


তরুণদের লিভার ক্ষতির আরেকটি বড় কারণ হয়ে উঠছে অ্যালকোহলবিহীন ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বা NAFLD। অতিমাত্রায় প্রক্রিয়াজাত খাবার, পরিশোধিত চিনি ও অস্বাস্থ্যকর চর্বি সমৃদ্ধ খাদ্যাভ্যাস, কম ফাইবার গ্রহণ এবং বসে থাকার জীবনধারা-সব মিলিয়ে লিভারে চর্বি জমার প্রবণতা বাড়াচ্ছে। স্থূলতা, উচ্চ কোলেস্টেরল ও টাইপ-২ ডায়াবেটিসের হার বৃদ্ধি এই ঝুঁকি আরও বাড়াচ্ছে। এ রোগও বছরের পর বছর নীরবে অগ্রসর হয় এবং একসময় স্থায়ী ক্ষতি ডেকে আনে।


লিভার রোগের নীরবতা ও দেরিতে ধরা পড়ার ঝুঁকি:


লিভার রোগের সবচেয়ে বিপজ্জনক দিক হলো এর প্রাথমিক সতর্ক সংকেতের অভাব। লিভার অনেকাংশে ক্ষতিগ্রস্ত না হওয়া পর্যন্ত তেমন কোনো ব্যথা অনুভূত হয় না। জন্ডিস, পেট ফোলা, মানসিক বিভ্রান্তি বা প্রচণ্ড ক্লান্তি দেখা দিলে রোগ প্রায়ই শেষ পর্যায়ে পৌঁছে যায়। যেহেতু লিভার রোগকে দীর্ঘদিন ধরে বয়স্কদের অসুখ হিসেবে দেখা হয়েছে, তরুণরা ঝুঁকি সম্পর্কে অনেক সময় অবগত নয়। তাই সচেতনতা ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা অত্যন্ত লিভার সমস্যার সম্ভাব্য লক্ষণ:


লিভার ফাউন্ডেশনের মতে, সময়মতো শনাক্ত করতে পারলে জীবন বাঁচানো সম্ভব। সতর্ক সংকেতগুলোর মধ্যে রয়েছে-


দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা দুর্বলতা, ত্বক ও চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া (জন্ডিস), পেট ফোলা বা অস্বস্তি, বমিভাব বা ক্ষুধামন্দা, সহজে আঘাতে রক্তপাত বা ফোলা, বিভ্রান্তি বা স্মৃতিভ্রংলিভার রক্ষায় করণীয়:


সিরোসিস প্রতিরোধে কিছু কার্যকর পদক্ষেপ হলো-


অ্যালকোহল কমানো বা সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা: অ্যালকোহলজনিত ক্ষতি প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।


লিভারবান্ধব খাদ্যাভ্যাস: সবজি, ফল, লীন প্রোটিন, ফাইবারসমৃদ্ধ শস্য গ্রহণ এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনি ও অস্বাস্থ্যকর চর্বি এড়িয়ে চলা।


নিয়মিত ব্যায়াম: মেটাবলিজম উন্নত করা, ওজন নিয়ন্ত্রণ ও লিভারে চর্বি জমা কমানো।


নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা: বছরে অন্তত এক বা দুইবার লিভার ফাংশন টেস্ট করানো।


পুষ্টি সহায়তা: ভিটামিন সি ও ডি, জিঙ্ক এবং ইকিনেসিয়ার মতো ভেষজ উপাদান রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও লিভারের সার্বিক স্বাস্থ্যে সহায়ক হতে পারে।


২৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে লিভার সিরোসিসের বিস্তার অত্যন্ত উদ্বেগজনক। অতিরিক্ত মদ্যপান, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও মেটাবলিক সমস্যা এই রোগকে তরুণদের মধ্যে ছড়িয়ে দিচ্ছে, অনেক সময় নীরবে। ঝুঁকি বোঝা, সময়মতো লক্ষণ শনাক্ত এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম ও নিয়মিত পরীক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে তরুণরা লিভার বিকলের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে পারে। সময় থাকতে প্রতিরোধই দীর্ঘমেয়াদি সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি।

Countdown Timer
00:01

Post a Comment

Previous Post Next Post